0

হাদিসের নির্দেশনা
হাদিস শরীফে পিতামাতার উপর সন্তানের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে আরও বিসত্মারিত ও সার্বজনীন বর্ণনা রয়েছে। নিম্নে কিছু মৌলিক নির্দেশনা তুলে ধরা হল:

নবজাতকের কানে আজান দেওয়া
আবু রাফায়ী (রা.) বর্ণনা করেন, যখন ফাতিমা (রা.) হাসান (রা.)কে প্রসব করেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কানে আজানদেন। (আবু দাউদ, তিরমিযি)

প্রত্যেক নবজাতকের সর্বপ্রথম অধিকার হল জন্মগ্রহণের অব্যবহিত পরেই তার কানে আযানের শব্দমালা উচ্চারণ করা। শিশুকে সর্বপ্রথম যে শব্দগুলো শুনতে হবে তা হল, আল্লাহ তার প্রভু এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার রাসূল। আমরা জানি যে, প্রত্যেক মুসলমানের সর্বশেষ অধিকার হিসেবে, তার মৃত্যুর পরে মুসলমানরা তার মাগফেরাত কামনা করে একত্রে জানাযার নামাজ আদায় করে থাকে। তাছাড়া, জানাযার নামাজ ব্যতিত সকল জামাতবদ্ধ নামাজের পূর্বেই আজানদেয়া হয়ে থাকে। তার কারণ হল, জানাযার নামাযের আজান জন্মের অব্যবহিত পরেই নবজাতকের কানে দেয়া হয়ে গেছে। এই হাদিস আমাদেরকে শিক্ষা দেয় যে, আমাদের জীবনকাল আজানও নামাজের মাঝখানের বিরতির ন্যায় সংক্ষিপ্ত। অতএব, আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করতে হবে এবং আমাদের সময়কে এমনসব কাজে উৎসর্গ করতে হবে যা আমাদের মৃত্যু পরবর্তী অনন্ত জীবনে কাজে আসবে। নবজাতকের কানে আযানের বাক্যগুলির উচ্চারণ আমাদের জীবনে নামাযের গুরুত্বকেও পরিস্ফুট করে।

বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবজাতকের ডান কানে আজানও বাম কানে ইকামতের আদেশ দিয়েছেন। (তাবরানি)

হাদিস শরীফে আরও বর্ণিত আছে, যখন আযানের শব্দগুলো উচ্চারণ করা হয় তখন আযানের শব্দ যে পর্যন্ত শুনা যায়, সে পর্যন্ত শয়তান পলায়ন করে থাকে। (বুখারি, মুসলিম)
অতএব, নবজাতকের কানে আযানের বাক্যগুলোর উচ্চারণ নবজাতকের জন্য শয়তানের অনিষ্টতা থেকে হেফাজতের মাধ্যমও বটে।

তাহনিক ও দোয়া
আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, লোকেরা তাদের সদ্যজাত শিশুদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর কাছে নিয়ে আসত। তিনি তাদের জন্য দোয়া করতেন এবং তাহনীক’ ক্রিয়া সম্পাদন করতেন। (মুসলিম)

তাহনিক’-এর প্রক্রিয়াটিকে নিম্নোক্ত হাদিসে ব্যাখ্যা করা হয়েছে:

আসমা বিনতে আবু বকর (রা.) বর্ণনা করেন, যখন আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা.) জন্ম গ্রহণ করেন তিনি তাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে যান। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কোলে ওঠিয়ে নেন। তিনি একটি খেজুর চিবান এবং চর্বিত খেজুরের একটি অংশ আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইরের মুখে রাখেন। অতঃপর তিনি তার জন্যে দোয়া করেন। (বুখারি, মুসলিম)

এই হাদিস আমাদেরকে নির্দেশনা দেয় যে, আমাদের নবজাতক শিশুদেরকে পরিবারের একজন বয়স্ক ও দীনদার লোকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। তিনি তখন নবজাতকের জন্য দোয়া করবেন এবং তাহনীক’ ক্রিয়া সম্পাদন করবেন। এটি এমন একটি সুন্নাত যার উপর বর্তমানে আমল বিরল। আমাদের প্রিয় নবিজীর এই গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাতটিকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্যে আমাদেরকে আন্তরিকভাবে সচেষ্ট হতে হবে।

আকিকা প্রদান
বুরাইদাহ (রা.) বর্ণনা করেন, অজ্ঞতার যুগে আমাদের রীতি ছিল, যখন কোন শিশু জন্মগ্রহণ করত তখন তার পরিবার কর্তৃক একটি ছাগল জবাই করা হত এবং এর রক্ত দ্বারা নবজাতকের মাথা রঞ্জিত করে দেয়া হত। যখন থেকে আমরা মুসলমান হলাম, নবজাতকের জন্মের সপ্তম দিনে আমরা একটি ছাগল জবাই করি, তার মাথা মুন্ডন করি এবং জাফরান দ্বারা তা আবৃত করে দেই। (আবু দাউদ)

উম্মে কারাজ (রা.) বর্ণনা করেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন যে, নবজাতক ছেলে হলে দুটি ছাগল এবং মেয়ে হলে একটি ছাগল জবাই করতে হবে। ছাগল চাই পুরুষ জাতীয় হোক কিংবা স্ত্রী জাতীয়। (আবু দাউদ, নাসায়ী)

হাদিসের ভাষ্যকাররা বলেন, ছেলের জন্য দুটি ছাগল জবাই করা এবং মেয়ের জন্য একটি ছাগল জবাই করা মুস্তাহাব। যে কোন নবজাতকের জন্য কেবল একটি মাত্র ছাগল জবাই করারও অনুমতি রয়েছে। নিম্নলিখিত হাদিস থেকে তা বুঝা যায়:

আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দৌহিত্র হাসান ও হুসাই (রা.) উভয়ের জন্য আকিকা সম্পাদন করেন এবং উভয়ের জন্য একটি করে ছাগল জবাই করেন। (আবু দাউদ)

আলী ইবনে আবু তালিব (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নাতি হাসান (রা.) এর আকিকা উপলক্ষে একটি ছাগল জবাই করেন। তিনি তাঁর কন্যা ফাতিমাকে ছেলের মাথা মুন্ডিয়ে দিতে বলেন এবং তার চুলের ওজনের সমপরিমাণ রূপা সদকা করতে বলেন। (তিরমিযি)

আকিকা কেবল নবজাতকের অধিকারই নয়, বরং তা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ রীতি। আকিকার গোস্ত পরিবারের সদস্য ও বন্ধু বান্ধবদের মধ্যে বিলি বন্টন করা হয়। এটি পুরো সমাজের মধ্যে একটি আনন্দ ও খুশির উপলক্ষ নিয়ে আসে। অধিকন্তু, যখন পিতা তার নবজাতক সন্তানের জন্য আকিকা সম্পাদন করে, পক্ষান্তরে সে নবজাতককে নিজের সন্তান হিসেবে ঘোষণা প্রদান করে এবং তার স্ত্রী ও পরিবারের প্রতি সন্দেহের সকল পথ রুদ্ধ করে দেয়। অন্যদিকে, দানের মাধ্যমে সমাজের অভাবী মানুষকে সাহায্য করা হয়, যা নবজাতকের ও পরিবারের জন্যে আল্লাহর রহমত লাভের একটি মাধ্যম।

ছেলের নামকরণ বা তাসমিয়া
আবু দারদা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে তোমাদের নাম ধরে এবং তোমাদের পিতার নাম ধরে ডাকা হবে। তাই তোমাদের সন্তানদের ভাল নাম রাখো। (আহমদ, আবু দাউদ)

আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের নামসমূহের মধ্যে আল্লাহর কাছে প্রিয়তম নাম হল আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রহমান। (মুসলিম)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুনণাহ থেকে জানা যায় যে, অন্যান্য নবিদের নাম এবং ভাল অর্থবোধক নামসমূহও উত্তম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ছেলের নাম রাখেন ইবরাহিম এবং নাতিদ্বয়ের নাম রেখেছেন হাসান ও হুসাইন। এটিও রাসূলের সুন্নাহ যে, যদি কেউ কোন শিশুর একটি খারাপ নাম কিংবা কোন অবাঞ্চিত নাম রাখে তবে তিনি তা পরিবর্তন করে অন্য নাম রাখতেন।

ইমাম মুসলিম রহ. বর্ণনা করেন, ওমর (রা.) এর এক কন্যার নাম ছিল আসিয়া এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নাম পরিবর্তন করে রাখেন জামীলা। অনুরূপভাবে আবু সালামা (রা.) এর এক কন্যার নাম ছিল বাররা। যার অর্থ হল পূণ্যবান। রাসূলুলস্নাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এই নামের মধ্যে পূণ্যবানের একটি দাবি রয়েছে। তিনি তা পরিবর্তন করে রাখেন যাইনাব।

ইমাম বুখারি রহ. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার নাম অনুসারে তোমাদের ছেলেদের নামকরণ কর, আমার উপনাম অনুসারে নয়; অর্থাৎ, আবুল কাসেম।

একটি শিশুর প্রথম উচ্চারিত শব্দ
আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের ছেলেমেয়েদেরকে জীবনের সর্বপ্রথম উচ্চারিত শব্দ হিসেবে লা ইলাহা ইল্লাহ’ (কালিমা তাইয়িবা) শিক্ষা দাও এবং মানুষকে তাদের মৃত্যুর পূর্বে অনুরূপ বলতে নির্দেশনা দাও। (বায়হাকি)

এই হাদিসটি কালেমা তাইয়িবার গুরুত্বকে পূণর্ব্যক্ত করে।

প্রথমত: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশনা দিয়েছেন যে, পিতামাতা তাদের নবজাতকের কানে এ কালিমা উচ্চারণ করে শুনাবে। দ্বিতীয়ত: তিনি বলেছেন, তাদের ছেলেমেয়েদেরকে তাদের জীবনের প্রথম কথা হিসেবে তা শিক্ষা দিতে। তৃতীয়ত: তিনি আমাদেরকে আরও পরামর্শ দিয়েছেন আমাদের জীবনের সর্বশেষ কথা হিসেবে তা আবৃত্তি করতে। হাদিস থেকে আরো জানা যায় যে, কানে শুনা প্রথম শব্দ ও জিহবায় উচ্চারিত প্রথম শব্দের, মানুষের বেড়ে ওঠা ও ব্যক্তিত্বের ওপর প্রভাব ফেলে।

উত্তম গুণাবলী শিক্ষা দান
আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের সন্তান-সন্ততিকে উপযুক্ত সম্মান ও মর্যাদা দান করবে এবং তাদেরকে সর্বোৎকৃষ্ট চারিত্রিক গুণাবলীতে সজ্জিত করবে। (আবু দাউদ)

হজরত সাদ ইবনুল আছ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন ব্যক্তির তার সন্তানকে সৎ চারিত্র ও গুণাবলী শিক্ষা দেয়া এক সা’ পরিমাণ দান করার চেয়ে উত্তম। (তিরমিযি)

সা’ হল ওজন পরিমাপের একটি আরবি পরিভাষা। দান করা একটি সওয়াবের কাজ। কিন্তু ছেলেমেয়েদেরকে সৎ চারিত্রিক গুণাবলী শিক্ষা দেওয়া ইসলামে তার চেয়েও অধিক সওয়াবের কাজ।

আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক নবজাতক শিশুই ফিতরাত’ (ইসলাম) এর উপর জন্মগ্রহণ করে। অতঃপর তার পিতামাতা তাকে খৃস্টান, ইয়াহুদী কিংবা অগ্নিপুজারী করে গড়ে তোলে। অতঃপর তিনি এই কুরআনের আয়াতটি তেলাওয়াত করে শুনান- অতএব, তুমি একনিষ্ঠ হয়ে দীনের জন্য নিজকে প্রতিষ্ঠিত রাখ। আল্লাহর প্রকৃতি (ফিতরাত), যে প্রকৃতির উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।’- রূম, ৩০:৩০ (বুখারি, মুসলিম)

একজন মুসলমান মনে করে, ইহজীবন হল শাশ্বত পরকালীন জীবনের পথে একটি মনজিল। তাই তাকে এই ইহকালীন জীবনের চেয়ে অনন্ত পরকালীন জীবনের সফলতার বিষয়ে অধিক সতর্ক থাকতে হবে। এজন্যে পিতামাতাকে তাদের সন্তান-সন্ততির ইহকালীন জীবনের সফলতার চেয়ে তাদের পরকালীন জীবনের সফলতার প্রতি অধিক মনোযোগী হতে হবে। পিতামাতার উচিৎ হবে তাদের সন্তান-সন্ততিকে সর্বোত্তম শিক্ষা ও তারবিয়াত দান করা এবং তাদের পরকালীন জীবনের শ্বাশ্বত সফলতাকে নিশ্চিত করা।

শিশুদের সালাম দেওয়া
আনাস ইবনে মালেক (রা.) কিছু ছেলেমেয়ের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন এবং তাদেরকে আস সালামু আলাইকুম’ বলে সালাম দিলেন। আর বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটি করতেন। (বুখারি, মুসলিম)

আমাদের ছেলেমেয়েদেরকে সৎ গুণাবলী শিক্ষা দেয়ার সর্বোত্তম মাধ্যম হল তাদের সামনে উদাহরণ পেশ করা। যখন আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদেরকে সালাম করি তখন আমরা তাদের প্রতি মর্যাদা ও সম্মান দেখায়। এমতাবস্থায় আমরা তাদের কাছ থেকেও অনুরূপ আচরণ আশা করতে পারি।

আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা তোমাদের ছেলেমেয়েদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন কর এবং তাদেরকে উত্তম চারিত্রিক গুণাবলীতে শোভিত কর। (ইবনে মাজাহ)

ছেলেমেয়েদের প্রতি সম্মান দেখানোর একটি উপায় হল তাদেরকে ঠিক সেভাবে শুভেচ্ছা জানানো যেভাবে আমরা বড়দেরকে শুভেচ্ছা জানাই। সম্মান প্রদর্শন বলতে এও বুঝায় যে, পরিবার তাদের বিশেষ অধিকার ও সমাজে তাদের বিশেষ অবস্থানের মূল্যায়ন ও তার স্বীকৃতি প্রদান করবে।

একটি ভাল দৃষ্টান্ত
আব্দুল্লাহ ইবনে আমের (রা.) বর্ণনা করেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে বসা ছিলেন। এমন সময় আমার মা আমাকে ডাকলেন এবং আমাকে কিছু দেয়ার ওয়াদা দিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি কি দিতে ইচ্ছা করেছেন? আমার মা জানালেন যে, তিনি আমাকে একটি খেজুর দিতে ইচ্ছে করেছেন। অতঃপর তিনি বললেন, যদি তুমি একটি মিথ্যা ওয়াদা দিয়ে তোমার সন্তানকে আহবান কর, তবে তা তোমার আমল নামায় একটি মিথ্যা হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হবে। (মুসলিম)

নামাজের আদেশ প্রদান
আমর ইবনে শুআইব (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের ছেলেমেয়েদেরকে সাত বছর হলে নামাজের আদেশ প্রদান কর এবং তারা দশ বছর বয়সে উপণীত হলে এজন্য তাদেরকে প্রহার কর (যদি তারা নামাজ না পড়ে) এবং তাদের বিছানা পৃথক করে দাও। (আবু দাউদ)

এই হাদিসটি কোরান মাজিদের নির্দেশনা- তুমি নিজেকে ও তোমার পরিবার পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর’ (৬৬:৬) -এর ব্যাখ্যাস্বরূপ। আমাদের অধিকাংশ অভ্যাসই সাত থেকে দশ বছরের মধ্যে গড়ে ওঠে। যদি পিতামাতা এ সময় তাদের ছেলে মেয়েদেরকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়মিতভাবে আদায়ের শিক্ষা প্রদান করে, আশা করা যায় তা তাদের জীবনে স্থায়ী অভ্যাসে পরিণত হবে। কোরান মাজিদ আরও বলে, নিশ্চয় নামাজ সকল অশ্লীলতা ও পাপ কাজ থেকে বিরত রাখে।’ (২৯:৪৫) নামাজ এভাবে আমাদের সন্তানদেরকে সৎপথে পরিচালিত করে এবং জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করে। এই হাদিসটি আরও বলে যে, একটি শিশু যখন দশ বছর বয়সে উপণীত হয় তখন তার একটি পৃথক বিছানা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। পাশাপাশি তা আমাদেরকে ইসলামের সৌন্দর্যবোধকে স্মরণ করিয়ে দেয়, যা আমাদের জীবনের বাহ্যিক দিকের পাশাপাশি আধ্যাত্মিক দিকের প্রতিও নির্দেশনা প্রদান করে।

কোরান মাজিদ শিক্ষা দেওয়া
মুআয জুহাইনি (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোরান মাজিদ শিক্ষা করবে এবং তার নির্দেশনা মেনে চলবে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিবসে তার পিতামাতাকে তাজ পরিধান করাবেন। যার উজ্জ্বলতা সূর্য থেকেও অধিক হবে। রাসূলুলস্নাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করে বলেন, তার নিজের জন্য তোমরা কি প্রতিদান আশা কর? (আবু দাউদ, আহমদ)

আলী (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যাক্তি কোরান মাজিদ মুখস্ত করবে, তার হালালকে হালাল জানবে, হারামকে হারাম জানবে, আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আল্লাহ তাআলা এমন দশ ব্যাক্তির ব্যাপারে তার সুপারিশ গ্রহণ করবেন, যাদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত হয়ে গিয়েছিল। (আহমদ, তিরমিযি, ইবনে মাজাহ, দারেমি)

কিয়ামতের দিবসে সুপারিশের বিষয়টি যতদূর সংশ্লিষ্ট, আল্লাহ তাআলা এই অধিকার তাদেরকেই প্রদান করবেন যাদেরকে তিনি ইচ্ছা করবেন এবং এসব ব্যক্তিরা আল্লাহ তাআলার অনুমতি সাপেক্ষেই অন্যদের জন্য সুপারিশ করতে পারবেন। কোরান মাজিদ বলে: সেদিন রূহ ও ফেরেস্তাগণ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবে, যাকে পরম করুণাময় অনুমতি দেবেন সে ছাড়া অন্যরা কোন কথা বলবে না। আর সে সঠিক কথাই বলবে। (আন- নাবা, ৭৮:৩৮) উপর্যুক্ত হাদিস অনুসারে, একজন হাফেজকে কিয়ামতের দিন সুপারিশ করার অধিকার দেয়া হবে। উল্লেখ্য যে, কাফের ও মুনাফিকদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত এবং তাদের পক্ষে কেউ সুপারিশও করতে পারবে না। হাদিসে উল্লিখিত সুপারিশ তাদের জন্যেই কার্যকর হবে যারা ঈমানদার, কিন্তু পাপ কাজ করেছে এবং আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনার পূর্বেই মৃত্যু বরণ করেছে। যদি পিতামাতা তাদের সন্তানদেরকে কোরান মাজিদের যথার্থ জ্ঞান দান করে এবং তাদেরকে হাফেজ হতে সহায়তা করে, তারা অবশ্যই তাদের ছেলেমেয়ের সুপারিশ লাভ করবে।

ছেলে মেয়ের প্রতি ভালবাসা ও দয়া
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সকল সৃষ্টি আল্লাহর পরিবার। আল্লাহর কাছে তারাই সবচেয়ে প্রিয় যারা তার পরিজনের প্রতি সদয় আচরণ করে। (বায়হাকি, যয়ীফ)

এই হাদিস আমাদেরকে কেবল নিজেদের ছেলেমেয়ের প্রতি নয়, বরং ধর্ম, বর্ণ, অঞ্চল নির্বিশেষে সকল ছেলেমেয়ের প্রতি সদয় হওয়ার শিক্ষা দেয়।

আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, একজন আরব বেদুঈন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আগমন করল এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বাচ্চাদের চুমু দিতে দেখে বিস্ময়াভিভূত হল। সে অবাক হয়ে বলল, একি! আপনি বাচ্চাদের চুমু দেন! উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললে, আল্লাহ তাআলা যদি তোমার অন্তর থেকে দয়া মায়া ছিনিয়ে নিয়ে থাকেন তবে আমি তোমাকে কোন সহায়তা করতে পারি না। (বুখারি, মুসলিম)

আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নাতি হাসান (রা.)কে আকরা ইবনে হুবাইস (রা.)-এর উপস্থিতিতে চুমু দেন। আকরা বললেন, আমার দশটি ছেলেমেয়ে আছে। অথচ আমি তাদের কখনো চুমু দেই নি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে তাকালেন এবং বললেন, যে অন্যদের প্রতি দয়া দেখায় না, সে আল্লাহ তাআলার দয়া থেকেও বঞ্চিত হয়। (বুখারি, মুসলিম)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহর অনুসরণ একটি পূণ্যতম কাজ, যা আল্লাহ তাআলার দয়া ও ক্ষমা লাভের একটি উসীলা। এই হাদিস অনুসারে, ছেলেমেয়েদের চুমু দেওয়া আমাদের প্রিয় নবিজির একটি সুন্নাত। অতএব, আমাদের উচিত, যথাযথভাবে এই সুন্নাতের উপর আমল করা।

প্রত্যেক ছেলেমেয়ের সাথে সমতাসুলভ আচরণ
নুমান ইবনে বশীর (রা.) বর্ণনা করেন, একদা তার পিতা তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নিয়ে যান এবং তাকে জানান যে, তিনি আমাকে একটি ক্রীতদাস দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পিতাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি তার সকল ছেলেমেয়েকে একটি করে ক্রীতদাস দিয়েছেন কিনা। আমার পিতা উত্তর দিলেন, তিনি তেমনটি করেন নি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, আল্লাহর প্রতি তোমার কর্তব্যকে স্মরণ রেখ এবং তোমার সকল ছেলেমেয়ের ব্যাপারে তাকে ভয় কর। (বুখারি, মুসলিম)

হাদিসে আরও বর্ণিত আছে যে, একথা শুনার পর নুমানের পিতা ক্রীতদাসটি ফিরিয়ে নেন। এই হাদিসের অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি একটি অন্যায় কাজ দেখতে চাই না।’ হাদিসটির এই বর্ণনার উপর ভিত্তি করে ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, ছেলেমেয়ের প্রতি অসমতার কিংবা অন্যায্য আচরণ করা ইসলামে হারাম ও নিষিদ্ধ। অন্যান্য ফুকাহায়ে কেরাম যেমন, ইমাম আবু হানিফা রহ., মালেক রহ. ও শাফেয়ী রহ. এটিকে মাকরূহ মনে করেন। ছেলেমেয়েদের প্রতি অসমতার আচরণ করা কেবল বৈধই নয়, বরং বিশেষ প্রয়োজনের ক্ষেত্রে উত্তমও বটে। দৃষ্টান্তস্বরূপ, যদি কোন ছেলে স্থায়ীভাবে অসুস্থ, বিকলাঙ্গ কিংবা অর্থনৈতিক সমস্যায় থাকে তখন পিতামাতা অন্যান্য ছেলেমেয়ের চেয়ে তাকে অধিক দয়া ও অনুগ্রহ করতে পারে।

আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন কন্যা সন্তানের পিতা হবে সে যেন তাকে আঘাত না দেয়, তার সাথে অবজ্ঞাপূর্ণ আচরণ না করে এবং পুত্রসন্তানকে তার উপর অগ্রাধিকার না দেয়। আল্লাহ তাআলা তাকে কন্যা সন্তানের সাথে সদয় আচরণ করার কারণে পরবর্তীতে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (আহমদ, হাকেম)

আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) আরও বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি কেউ তার একটি কন্যা সন্তানের সাথে সদয় আচরণ করে এবং তাকে জীবন্ত কবরস্ত না করে, আর পুত্র সন্তানকে তার উপর অগ্রাধিকার না দেয়, আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (আবু দাউদ)

আমাদের স্মরণ রাখা উচিৎ যে, প্রাক ইসলামি যুগে আরবরা তাদের কন্যা সন্তানকে এতই অপছন্দ করত যে, যদি কেউ কোন কন্যাসন্তানের পিতা হত, তবে সে তাকে জীবন্ত কবর দিত। ইসলাম কেবল এই প্রথার মুলোৎপাটনই করে নাই; বরং কন্যাসন্তানকে পুত্র সন্তানের সমান মর্যাদা প্রদান করেছে। হাদিসের সুসংবাদ- আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’ - থেকে বুঝা যায়, কন্যা সন্তানের সাথে সম্মান ও মর্যাদাপূর্ণ আচরণ করা আল্লাহর তাআলার সন্তুষ্টি, দয়া ও পুরষ্কার লাভের একটি উপায়। আরও উল্লেখ্য যে, এই হাদিস ও ইতোপূর্বে বর্ণিত হাদিস অনুসারে, যদি কেউ আল্লাহ তাআলার দয়া ও অনুগ্রহ লাভ করতে চায় তবে তাকে প্রথমত, জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলার হুকুম মেনে চলতে হবে এবং অতঃপর এই হাদিসের উপর আমল করতে হবে। যদি কেউ নিয়মিত আল্লাহর বিধানের অবাধ্য হয় এবং কেবল তার কন্যা সন্তানের সাথে সম্মান ও মর্যাদাপূর্ণ আচরণ করে তবে তা তার জান্নাতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে না।

আয়েশা (রা.) বলেন, একদা এক নারী তার দুই কন্যা সন্তানকে নিয়ে আমার কাছে খাবার ভিক্ষা চাইতে আসে। আমি বাড়িতে কেবল একটি মাত্র খেজুর খুঁজে পাই, যা আমি তাকে দান করি। সে এটিকে দুভাগে ভাগ করে দুই মেয়েকে খাওয়ায় এবং নিজে তা থেকে কিছুই খায় না। অতঃপর সে আমার ঘর ছেড়ে চলে যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমন করলে আমি তাঁকে এ নারী সম্পর্কে বলি। তিনি বললেন, যার কন্যা সন্তান রয়েছে এবং সে তাদের প্রতি সদয় আচরণ করে সে কিয়ামতের দিন তাদেরকে দেখতে পাবে যে, তারা তার জন্যে জাহান্নাম থেকে ঢালের কাজ দিচ্ছে। (বুখারি, মুসলিম)

আনাস ইবনে মালেক (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়া পর্যন্ত দুটি কন্যা সন্তানকে মমতার সাথে লালন-পালন করবে, কিয়ামতের দিন সে ও আমি এমন থাকব। আনাস (রা.) বলেন, যখন তিনি একথা বলছিলেন, তিনি তাঁর দুই আঙ্গুল তোলেন এবং দুটিকে কাছাকাছি রাখেন। (আবু দাউদ, তিরমিযি)

আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি তিনটি কন্যা সন্তান কিংবা বোনের দেখাশুনার দায়িত্ব নিবে, তাদের সাথে উত্তম আচরণ করবে, তাদের উত্তম শিক্ষা-দীক্ষার ব্যবস্থা করবে, আল্লাহর কাছে তার প্রতিদান হল জান্নাত। (আবু দাউদ, তিরমিযি)

একটি বিধবা কন্যার দেখাশুনার দায়িত্ব নেওয়া
সুরাইকা ইবনে মালেক (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি কি তোমাকে সর্বোৎকৃষ্ট দান সম্পর্কে বলব না? তা হল তোমার সেই কন্যা সন্তানকে সহযোগিতা করা, যে তোমার কাছে ফিরে এসেছে এবং তুমি ব্যতিত যার কোন সহায়তাকারী নেই। (ইবনে মাজাহ)

পশ্চিমা সমাজে পিতামাতা তাদের প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েদের ব্যাপারে কোন দায়িত্ব অনুভব করে না। পক্ষান্তরে, ইসলাম এটিকে পিতামাতার একটি মৌলিক দায়িত্ব হিসেবে বিবেচনা করে। ইসলাম প্রাপ্ত বয়স্কা কন্যা সন্তানের দেখাশুনার জন্যে বিশেষ পুরষ্কারের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছে এবং এই কাজের জন্য ব্যয় করাকে সর্বোত্তম দান হিসেবে অভিহিত করেছে। এভাবে ইসলাম কন্যা সন্তানকে কেবল একটি সম্মানজনক ও মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানই দান করে নি, বরং তাদের মৌলিক অধিকার ও প্রয়োজনমূহেরও নিরাপত্তা বিধান করে। এমন উত্তম শিক্ষার কারণেই মুসলিম সমাজে এখনো একক মাতৃপরিবারের অস্থিত্ব দেখা যায় না। এমন নারীরা সর্বদা কারও পরিবারের অংশ হয়, যেখানে তাদের জাগতিক ও মানসিক প্রয়োজনসমূহ পূরণ হয়। হয়ত পিতার মাধ্যমে কিংবা ভাইয়ের মাধ্যমে। একক মায়ের বিষয়টি পশ্চিমা সমাজে একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা। সেখানে কোন ধরনের জাগতিক ও মানসিক নিরাপত্তা ছাড়া বসবাসকারী নারীদরে সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পশ্চিমা সমাজ এসকল নারীর জন্য একটি সম্মানজনক সমাধান খুঁজে ফিরছে।

স্বামী পরিত্যক্তা কিংবা বিধবা মাতাদের জন্য সুসংবাদ
হজরত আওফ ইবনে মালেক আশযাঈ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি ও একজন স্বামীগতা রমনী কিয়ামতের দিন এই দুই আঙ্গুলের মত (কাছাকাছি) থাকব। স্বামীগতা রমনী হল সে, যে স্বামী থেকে বঞ্চিত; অথচ সে রূপ-যৌবন ও সমাজে সম্মানের অধিকারী। কিন্তু নিজেকে (পুনরায় বিয়ে না করে) ধরে রেখেছে ছেলেমেয়েদের দেখাশুনা করার জন্য; যতদিন না তারা বয়ঃপ্রাপ্ত হয় কিংবা মৃত্যুবরণ করে। বর্ণনাকারী বলেন, একথা বলার সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মধ্যমা ও তর্জনী উঁচু করে দেখান। (আবু দাউদ)

যদিও ইসলাম তালাক প্রাপ্তা কিংবা স্বামীগতা বিধবা নারীদেরকে দ্বিতীয় বিয়ে করতে উৎসাহিত করে, তা বিয়ের বিবেচনা সেই স্ত্রীলোকের উপর ছেড়ে দেয়। যদি কোন নারী ছেলেমেয়ের ভালবাসা ও দেখাশুনার জন্য বিয়ে না করাকে পছন্দ করে তার পুরষ্কার হল কিয়ামতের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুসঙ্গ লাভ করা। যা হোক, এটি পরিষ্কার যে, জীবনে কেবল এমন একটি ছোট কাজই কিয়ামতের দিন কোন পুরষ্কার বয়ে আনে না। এই পুরষ্কার লাভ করার জন্য একজন নারীকে একটি ধার্মিক ও পবিত্র জীবন যাপন করতে হবে এবং তার ছেলে মেয়েদেরও দেখাশুনা করতে হবে।

ছেলে মেয়েদের জন্য খরচ করা
হজরত আবু মাসঊদ বদরী (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কোন ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তার স্ত্রী ও ছেলে মেয়েদের জন্য ব্যয় করে, তা তার আমল নামায় দান হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়। (বুখারি, মুসলিম)

হজরত উম্মে সালামা (রা.) বর্ণনা করেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি যদি আমার প্রথম পক্ষের ছেলে মেয়েদের উপর খরচ করি, তবে কি কোন সওয়াব লাভ করব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর করলেন, তুমি তাদের উপর খরচ কর। তুমি যা-ই তাদের উপর খরচ করবে তার সওয়াব ও প্রতিদান লাভ করবে। (বুখারি, মুসলিম)

হজরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা তোমাদের টাকা পয়সা (দীনার) আল্লাহর রাস্তায় দান কর। যে টাকা তোমরা ক্রীতদাস মুক্ত করার জন্য ব্যয় কর, যে দীনার তোমরা গরীবদেরকে দান কর এবং যে দীনার তোমরা স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য ব্যয় কর- তন্মধ্যে পূণ্যের বিচারে সর্বোত্তম হল যা তোমরা পরিবার ও সন্তানদের জন্য ব্যয় কর। (মুসলিম)

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আছ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন ব্যক্তি তার অধীনস্তদের, যাদের জীবন -যাপন তার নিয়ন্ত্রণাধীন তাদের, উপযুক্ত অধিকার প্রদান থেকে বিরত থাকা একটি বড় পাপ। (আবু দাউদ)

ছেলে মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করা
হজরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সন্তান সন্ততি লাভ করেছে সে যেন তাদেরকে উত্তম চারিত্রিক গুণাবলী শিক্ষা দেয় এবং যখন তারা প্রাপ্ত বয়সে উপণীত হয়, তাদের যেন বিয়ের ব্যবস্থা করে। যদি পিতামাতা তা করতে অবহেলা করে কিংবা তা বিলম্বিত করে এবং ছেলে মেয়েরা নিষিদ্ধ কাজে জড়িয়ে পড়ে, তবে তাদের অপরাধ ও পাপের জন্য পিতাকে দায়ী করা হবে। (বায়হাকি)

এ হাদিস থেকে এমনটি বুঝা যায় না যে, ছেলেমেয়েরা তাদের পাপের জন্য দায়ী হবে না। হাদিসের ভাষ্য হল, এটি হল পিতামাতার বিশেষত, পিতার দায়িত্ব যে, তাদের ছেলেমেয়েদের জন্য বিয়ের ব্যবস্থা করবে। যদি তারা তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয় এবং ছেলেমেয়েরা পাপে লিপ্ত হয়ে পড়ে তবে পিতাও তাদের পাপের জন্য দায়ী সাব্যস্ত হবে।

Post a Comment

 
Top